আমি লেখাটার
আবতারনা করছি তীব্র হাতাশা থেকে। তীব্র একটা যন্ত্রণা, মনঃকষ্ট থেকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক্তা বিভীষিকা বয়ে যাচ্ছে আমরা যারা ‘মুসলিম’ ঘারানার দেশ
এ বাস করি তাদের উপর দিয়ে। ঝড় সেই পুরনো কাসন্দি, ইসলামী মৌলবাদীদের তাণ্ডবলিলা। আমি এই কীট-পতঙ্গ গুলো নিয়ে লেখব না। তবে তারা
থাকবে সমস্ত লেখা জুড়ে, বিভীষিকা হয়ে। আর সচলায়তনে এদের নিয়ে বিস্তর লেখা হয়েছে।তবে
শ্রেণীর ব্যাপারটা কেমন জানি উপেক্ষিত থেকে গেছে। হাঁ, আমি উচ্চবিত্ত ও উচ্চ–মধ্যবিত্তের
‘কো–অপশন’ নিয়ে লিখতে বসেছি।
তবে হাঁ, সারা
পৃথিবীতে আজকে ইসলামী মৌলবাদ বেশ টক অফ দা টাউন এ পরিণত হয়েছে। মৌলবাদ শব্দটি নিয়ে
বেশ বিরোধিতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা ‘ইসলামইক রেভাইভাল’ এর স্বপ্ন দেখে, তারা
মৌলবাদ শব্দটির বিশেষ বিরোধী। আবার আছে বাম চিন্তাবিদও যারা ইসলামি মৌলবাদ কে
পশ্চিমের আবিষ্কার বলে দায়িত্ব এড়াতে চায়। একজন তো আবার জামাত তত্তের সমর্থক
হিসেবে মাজখানে বেশ সরব ছিলেন। কিন্তু ইসলামী মৌলবাদ যে একটি বিশেষ মাথাবাথা সভ্য
দুনিয়ার জন্য তা অনেকেই ভুলে যান। ইসলামী ব্যাংকিং নিয়েও এরা বেশ উৎসুক। মুদারাবা
ব্যাংকিং তাদের আরও লাভের পথ দেখায়।
বলে রাখা
বাঞ্ছনীয় আমি কিন্তু ফিলিস্তিনে ইজরাএলি আগ্রাসন অথবা ইঙ্গ-মারকিন সাম্রাজ্যবাদ
নিয়ে লিখতে বসিনি। আমি যে ‘বেসিক’ মৌলবাদ এর কথা বলছি, তার ছাপ আছে কাজী ইমদাদুল
হকের আব্দুল্লাহ উপন্যাসে, আছে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লাল শালু তেও। আছে তারেক মাসুদ
পরিচালিত মাটির ময়নায়, আছে হুমায়ুন আজাদের লেখালিখির পরতে পরতে। হাঁ, মৌলবাদ তও্ব
তো ভারতেও আছে, মার্কিন দেশেও আছে। হাঁ, আছে। কিন্তু ইসলামী মৌলবাদের বিশেষ
চরিত্রটি আর উপেক্ষার নয়। আজকের ইসলামী মৌলবাদ দুদু মিয়ার আন্দোলন নয়, হাজি শারিয়ত
উল্লাহ্র গ্রাম কেন্দ্রিক আন্দোলন নয়, যে আন্দোলন গুলো ছিল শ্রেনি সংগ্রামের।
ইসলামী মৌলবাদ
আজকে এক বিশেষ শ্রেণীর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, পাঠককুল শ্রেণীটিকে আমরা ভাল ভাবেই
চিনি, কিন্তু তাদের কামেলেওন চরিত্র ঠাহর করতে পারি না। হাঁ, মিশরে ব্রাদারহুড তো
ছিল শ্রেণীর বিরদ্ধে একটি প্রতিবাদ, হাঁ ছিল, কিন্তু সেই আন্দোলন কি মুক্ত সমাজ
প্রতিষ্ঠার আন্দোলন কখনও ছিল? ছিল না। মিশরে তারা শরিয়া এখনো চালু করেনি কিন্তু
চেষ্টা চালাচ্ছে পুরোদমে। ইরানের ভিতর যে
তীব্র নিপীড়ন চলছে তা আমরা অনেকেই জানি না, যেমন জানি না সাউদিতে কাজ করতে যাওয়া
শ্রমিকের দুঃসহ জীবনের আসল স্বরূপ।
মৌলবাদ মুক্ত
পৃথিবীর কথা বলে না, সত্যকে সে ভয় পায়, নারীকে দেহ সর্বস্ব মনে করে, তাই হিজাব
নিকাব ঈশ্বরের আদেশ বলে চালিয়ে দেয়। বড় কথা হল ধনতন্ত্রের সে পূজারী। তাই আজ
বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত
ও উচ্চ–মধ্যবিত্তের কাছে খুব প্রিয় হয়ে
উঠেছে এই ব্যাপারটি।
যেইখানেই
যাবেন দেকবেন ইসলাম নিয়ে একটা আলোচনা থাকছেই, ইসলাম নিয়ে আলোচনায় আমি কোনও সমস্যা
দেখি না। কিন্তু আলোচনার বিষয় বস্তু যখনি হিজাব, ইসলামী রাষ্ট্র আর
ইহুদি-খ্রিস্তান ষড়যন্ত্র তখন বুজতে হয়, আলোচনা ইসলাম নিয়ে হচ্ছে না। বরং আলোচনার
বিষয় বস্তা পচা, এতে ধর্মের স্থান পর্যন্ত নাই।
আরও আছে।
দেশের সেকুলার সংস্কৃতিকে আক্রমণ করারও এক বিশেষ স্থান হল এই সব আলোচনা। পহেলা
বৈশাঁখ এঁর হিন্দুয়ানী চরিত্র এদের বিশেষ মাথা বাথার বিষয়। তাই একটি আনকোরা বস্তা
পচা ছবি নিয়ে এরা যে হই হই রই রই করে উঠবে না, তাই চিন্তা করাটা ভুল হতো।
হাঁ, আপাতত
সহিংসতার সাথে জড়িতরা সকলেই সাধারণ মানুষ, কিন্তু তাদের এই ইসলামী চেতনা তৈরি
হয়েছে শাসক শ্রেণীর হাঁতেই। বঙ্গবন্ধু তীব্র ভাবে বার্থ হলেন, তাকে হত্যা করে দেশ
দখল নেয়া সেনাপতি জিয়া আরেক কাঠি সরেস, দেশকে পাকিস্তানি কায়দায় পরিচালনা করলেন।
এরশাদ নামক শয়তানটিও সাধারণ মানুষের ইসলামী ‘sentiment’ কে ভাল করে ঘেঁটেছে। ফায়দা লুটেছে সমাজের
উপর তলার মানুষ, আর ভিকটিম হয়েছে সাধারণ জনগণ।
আজকে যারা
মন্দির প্যাগোডা ধ্বংস করেছে তারা মাদ্রাসার মাথা ধোলাই হওয়া দরিদ্র শিক্ষাত্ী,
কিন্তু তাদের ‘ideological’ সাপোর্ট এর জায়গাটা
হল সমাজের সুবিধা প্রাপ্তরা। আজকে উচ্চ, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরে যাকির
নায়েক কোক পেপসির মতো গেলা হয়। যাকির যখন
বলে যে মুসলমান ছ্যারা কারো কোন অধিকার নাই, সকলে দ্বিতীয় শ্রেণির তখন খুব খুশি হয়
তারা। জাকিরের তীব্র নারী বিদ্বেষী ফতোয়া তারা ধর্ম আদেশ বলে ধরে নেয়।
পৃথিবীতে আজ
পরিবেশ বাঁচানোর সংগ্রাম চলছে, নারি পুরুষের সমঅধিকার নিয়ে বাহাস হচ্ছে, সমকামীদের
অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে। মৌলবাদের ঘেরাটোপে বন্দী বাংলাদেশে হচ্ছে হিজাব
বাদ্ধকরনের চেষ্টা, দেশিয় সংস্কৃতির বিরদ্ধে জিহাদ ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। চলছে মুক্ত চিন্তা বন্ধের নানা পাঁয়তারা। বেশীর ভাগ তরুন তরুণী যুবক যুবতীও মৌলবাদ
নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়,না জানি ইসলামের বড় ক্ষতি হয়ে যায়।
সময় এসেছে ইসলাম
আর ইসলামী মৌলবাদের মধ্যে ভেদ রেখা টানার। স্পষ্ট করে বলার সময় এসেছে ইসলাম পালন
করতে কোন বাধা নাই, ইসলাম নিয়ে চিন্তা করতে সমস্যা নাই। কিন্তু ধর্ম ভিত্তিক
সমাজের ধারনা বিলীন হয়েছে বহু আগে, মধ্যযুগের সমাপ্তির পরেই। ব্রিটিশ উপনিবেশ
প্রতিষ্ঠা পূর্ব ভারত ছিল না ইসলামী, ছিল
একটি বহুত্ববাদী সমাজ। পূর্ব বাংলা ছিল সেই সমাজ বাবস্থার ‘Furthest Frontier’.
আর হাঁ, উপমহাদেশে
ইসলাম কেবল শান্তির ধর্ম হিসেবেই আসে নাই,ইসলামী উপনিবেশিক আগ্রাসনও ছিল একটি
প্রধান নিয়ামক।
No comments:
Post a Comment