Friday, October 10, 2014

ব্যাঙ্গোরে শহুরে পরিব্রাজন[1]

           
এইখানে উচ্ছল, সৃষ্টিশীল বৃষ্টি ঝরে না
বরং নির্জীব শহুরে পরিব্রাজন হয়ে ওঠে হতাশ জীবনের ক্লান্ত ব্যাবচ্ছেদ,
কৃএিম টিপ টিপ বারিধারা মনে করিয়ে দেয়,
পাবলিক বাসের বুড়ো চালক আরও বুড়ো হয়েছেন এই দুই বছরে

পার্কের কনসার্ট থেকে ভেসে আসা গানের তালে
নাচতে থাকা বয়স্ক রমণীটির  ফুটবল-প্রীতি
ইঙ্গিতবহ বিগত যৌবনের কামন্মাদ উচ্ছাসের,
জ্বলন্ত পুরুষালী লীলাখেলার লাস্যময়ী প্রহরী
হয়েছিল কোন একদিন সে

তবুও কোথায় যেন একটা শূন্যতা
নগর জীবনের বৈচিত্র্যহীন নির্লিপ্ততা
জয়েসের উপন্যাসে যা হয়ে ওঠে অস্তিত্ববাদী সংগ্রামের প্রতীক
অথবা বোদলেয়ারের কবিতায় মোহনীয় অথচ কদর্য বেশ্যালয়

তবে নাগরিক অসারতার চিত্রকল্প হয়ে ওঠে না
কোন বাংলাভাষী কবির বয়ানে
      তিন রমণীর কাস্বিদা
      কিংবা সৃষ্টিসুখের উল্লাস
      অথবা রবি ঠাকুরের গীতিবিতান,
শহুরে সভ্যতার বিন্যাসকে গ্রাম্য মেঠোপথের সোঁদা গন্ধ উগড়ে দেয়

সপ্তাহান্তের আমোদে জারিত দেহগুলো তবু কেন
গানের মাঝে অনাগত দিনের আগমনী বার্তা শুনতে পায়,
পরাজয়ের নিয়তি আর স্বাচ্ছন্দ্যের উল্লাসকে এক গ্লাসে ধারণ করে
পান করতে শিখে যায়, অনেকটা আমাদের খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর মতো, তামাকের ঘ্রাণ যাদের জন্য ক্ষুধা ভুলে থাকার অনুষঙ্গ,
   স্মৃতির শহরে তাই বেঁচে থাকে জীবনকে হাতড়ে বেড়াবার উপজীব্য
                                                ১০/০৪/২০১৪
                                                                                                                                                                  




[1] ব্যাঙ্গোর যুক্তরাষ্ট্রের মেইন রাজ্যের একটি ছোট শহর।  

Saturday, September 20, 2014

অচেতনের চার্বাকীয় বয়ান

পদ্মা গাঙ্গের মাঝি ও ভাই
তুমি কি জানো
বিশ্বায়নের পাগলা হাওয়া খঞ্জর উঁচিয়ে হুংকার করে বলছে
   এলোমেলো করে দিতে চাই মাঝির সাজানো সংসার,
সরকার বাহাদুর তোমার দাপিয়ে বেড়ানো নদীখানা
    ইজারা দিয়েছে বিদেশী প্রভুদের কাছে।

প্রমত্ত পদ্মা আজ প্রায়-বিস্মিত স্মৃতিচিহ্ন মাত্র,
প্রকৃতির সর্বনাশা ভাঙ্গা-গড়ার খেলা, দুই কূল ছাপানো প্লাবনের চক্রান্ত
            ম্রিয়মাণ শহুরে নষ্টালজিয়ার জাদুঘরে রক্ষিত,

ব্যক্তি মানুষের লোলুপ দৃষ্টি, রাষ্ট্রের অপরিণত বুদ্ধি, বণিকের বর্বরতা
আর উন্নয়ন অর্থনীতির ধ্বংসান্মুখ হিংস্রতা
         তোমার পৃথিবীতে নিত্য হানা দিয়ে ফেরে আজ।

তুমি কি এখনো স্বপ্ন ফেরি করো,
অথবা ভাওয়াইয়া আর ভাটিয়ালীর মোহময় ডাকে গ্রাম-বাংলা আলোকিত করো?
নাকি দেশী মানব-বিধাতাদের গ্লোবাল ভিলেজ আর সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পের জয়গান
কেড়ে নিয়েছে তোমার মুখের ভাষা
আর কদর্য জাতীয়তার চেতনা, এবং ধর্মের ঢাক গুর গুর
তোমাকে চিরতরে শৃঙ্খলিত করার ফন্দি-ফিকির করছে?          
         

Sunday, July 20, 2014

স্টারবাক্সে দুপুরের খোলামেলা ভাবনা

তারা স্বপ্ন দেখতে বলে
সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার স্বপ্ন
তবে রক্তস্নাত সেই সিঁড়ি, দুঃস্বপ্নের কণ্টকসজ্জাও বটে
মায়ের আহাজারি আর শিশুর আর্তচিৎকার মিশে আছে তাতে
আর আছে পুঁজিবাদী শূন্যতার হতাশাবাদী নিরম্বু প্রত্যাখ্যান   

দূরে কোথায় বোমারু বিমান, সাঁজোয়া ট্যাংক, জিঘাংসায় উন্মাদ হানাদার    
দাপিয়ে বেড়ায়
নিঃশেষ হয় জীবন, জীবনের সকল অবলম্বন
স্থাপত্যের শৈলীতে তৈরি হয় মানব মননের ধ্বংসাবশেষ  
তবুও ওরা বলে স্বপ্ন দেখা লাগে, দেখতে জানতে হয়।

বেহুলার বাসরঘর, হাশরের ময়দান
কিচ্ছু যায় আসে না,
যদি ধবল বকের ন্যায় শ্বেতাঙ্গ স্বপ্নকে অবলীলায়
       মোহগ্রস্তের ন্যায় আর কাম-কাতর দৃষ্টিতে
           আঁকড়ে ধরে থাকা যায়।   

                               ১৯/০৭/২০১৪ 

Wednesday, June 11, 2014

জারী হলো মৃত্যু-পরোয়ানা (দাউদ হায়দারকে উৎসর্গকৃত)

আমরা আছি নির্বাসনে
         চরম বিশ্বায়নের এই অপার সম্ভাবনারকালে
যখন ইংরেজি ভাষার দাপুটে রাগে
         খেই হারিয়ে ফেলে অ-বিশ্বায়িত কোটিজন

পশ্চিমের পালোয়ানেরা আছে বেশ
সেই যেদিন থেকে তারা কাঠের জাহাজে করে এই কূল ওই কূলে গেল
সেদিন নির্বাসনে গেলো তাবৎ মানব সন্তান
আজ তারা অচ্ছুৎ তৃতীয় বিশ্বের তামাদি জনগণ
শ্বেতাঙ্গ ছড়ির আঁচরে জীবন বিপর্যস্ত, আরও আছে
পশ্চিমাদের পোষা কুকুরগুলো
        যাদের আমরা শাসক-শ্রেণী বলে মাঝে মধ্যে গাল-মন্দ করে থাকি।

বিশ্বায়ন, বিশ্বায়িত-প্রকল্প
আমাদের প্রিয় নেতাকে করে ফেলে অপাংক্তেয়
সন্ত্রাসবাদী বলে মুক্তিকামী জনগণের সংগ্রামকে
রক্তের সাগরে ভেসে যায় হাজারো দেহ, লাশের গন্ধে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে
পুঁজিবাদের দাপটে নির্বাসনে যায় ভালোবাসা, আর হাজার বছরের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ।

                                                     ১১ই জুন, ২০১৪।                     
         

             

          

Thursday, April 17, 2014

ছত্রধরের অসমাপ্ত গাঁথা

* নিউ ইংল্যান্ডের ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠী নিধনের করুণ ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত 

আদিবাসী অধিকার হরণ     
   একটি অত্যন্ত সহজ-সরল বিষয়,          
     সামরিকায়ন, জমি দখল, গণ ধর্ষণ, গণ উদ্বাস্তুকরণ             
       রাষ্ট্রযন্ত্রের কারুকার্যশোভিত তরলীকৃত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

জাতীয়তাবাদের জীবন্ত এই সন্ধ্যায়    
আদিমতাকে হত্যা করেসমস্ত আদিকে অন্তে পরিণত করে       
চাকমা, সাঁওতাল, জুম্মা খেদিয়ে            
আমরা সভ্যতার চেতনাগ্রাহী, শান্তি-সন্ধানী তোরণ নির্মাণ করে চলেছি।